Thursday, October 23, 2014

Bengali Shayari-56

আপনার প্রেমে আমি আত্মদান করেছি, সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছি।
এখন আপনি আমাকে প্রেমের প্রদীপ,
পূজোর ফুল বা পায়ের দাগ যা ইচ্ছে বলতে চান বলতে পারেন।
আপনার সে অধিকার রয়েছে।
আপনার শ্রদ্ধা, আপনার প্রেম, আপনার ধিক্কার সব কিছুই শিরোধার্য।
সব কিছুই আমার গ্রহণীয়, সব কিছুই আমার পরম প্রাপ্য।

Bengali Shayari-55

কঠিন যাতনাময় ছিন্নভিন্ন দিন, বিনিদ্র ভগ্নাংশ রাত, এই আমি পেয়েছি। জীবন এইরকমই যার আঁচল যতটুকু ততটুকুই ভাগ্যদেবী তাকে দিয়ে থাকেন। হৃদয়কে যতবার বোঝাবার চেষ্টা করেছি ততবারই শুনেছি কেউ যেন হেসে উঠেছে আর বলছে-হৃদয় বুঝে তুই কি করবি? নে, তোকে মৃত্যু দিলাম, এটা বুঝে নাও। মৃত্যু কি সেটাও কি ছাই আমি বুঝতে পেরেছি? না মৃত্যু কি তাও বুঝলাম না। শুধু জানি আট প্রহর ধিকি ধিকি জ্বলে যেতে হবে। হৃদয়ের মতো সঙ্গী যখন জুটে গেছে জানি হৃদয়যন্ত্রণার হাত থেকেও নিষ্কৃতি নেই আমার। হৃদয় মানেই হৃদয়যন্ত্রণা এটুকু জানি। এর চেয়ে বেশী আর আমি জীবন হৃদয়, মৃত্যু সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিছুই না।

Bengali Shayari-54

দীর্ঘ পথ চলতে চলতে যখন আমার কাঁধ ঝুঁকে আসে, চড়াই-এর উচ্চতায় যখন হাঁপিয়ে উঠি, যখন নিঃশ্বাস বুকের একপাশে জড়ো হয়ে ফুলে ওঠে আর মনে হয়, আমার চলবার শক্তি নেই, এখানেই থেমে যেতে হবে আমার,- তখন আমারই লেখা ছোট্ট একটা কবিতা আমার সামনে এসে বলে,- হে কবি হে আমার স্রষ্টা, এসো আমার কাঁধে হাত রাখো, এসো, আমি তোমার সমস্ত বোঝা তুলে নিই।

Bengali Shayari-53

প্রেয়সীর সঙ্গে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়েই মনে হল যেন বহুদিনের পুরানো বন্ধু দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর আবার মিলিত হল। এ যেন নতুন পরিচয় নয়, পুণঃমিলন মাত্র।

Bengali Shayari-52

এবার তাহলে যাই।
যাবার আগে তোমার কাছে আমার হৃদয়টাকে রেখে যাচ্ছি।
মাঝে মাঝে সে তোমাকে আমার কথা মনে করিয়ে দেবে।

Bengali Shayari-51

এসো প্রিয়া, আজ তোমাকে কাঁধে তুলে নিই, তুমি মুখটা তুলে তোমার দুষ্টু ঠোঁট দিয়ে চাঁদের মাথায় চুমু খেয়ে নাও। আজ রাত্রে চাঁদটাকে দেখ, কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে চাঁদটা আমাদের কত কাছে চলে এসেছে। এত কাছে যে তুমি উঁচু হয়ে মুখ বাড়ালেই তার ঠান্ডা কপালে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে দিতে পার। এসো প্রিয়া, এসো, তোমাকে তুলে ধরি।

Bengali Shayari-50

হৃদয়ের জন্য বেদনা রয়েছে হৃদয়ের জন্য আনন্দও। এই যে পৃথিবী, এখানেই নরক রয়েছে, এখানেই স্বর্গ। সফল প্রেমই স্বর্গ, বিফল প্রেমই নরক।

Bengali Shayari-49

হৃদয়ে তোমার বেদনাময় স্মৃতি মাঝে মাঝে এসে হাজির হয়। যে ভুলে যাওয়া কোন মন্দিরে পুরানো প্রেমের, অতীতের কোন, আপনজনের কথা মনে পড়ে যায়। হৃদয় তো মন্দিরের মতোই, প্রেম তো পূজা, স্মৃতি তো পুণ্যময়তা।

Bengali Shayari-48

যে হৃদয় থেকে প্রেম বিদায় নিয়েছে,
যে হৃদয় শূন্য হয়ে গেছে, সে হৃদয়কেও হৃদয়ই বলতে হয়!
যেন যে বাগান শুকিয়ে গেছে, তৃণপত্রপুষ্পহীন হয়ে পড়ে রয়েছে তাকেও ‘বাগান’ই বলতে হবে।
প্রেমহীন হৃদয় কি হৃদয় পদবাচ্য? মরুভূমিকে কি নন্দনকানন বলা উচিত?

Bengali Shayari-47

দেখ, ধীরে চল, আরও আস্তে। দেখ, ভেবে চিন্তে পা ফেলবে। লক্ষ্য রেখ, কোথাও জোরে যেন পায়ের শব্দ বেজে না ওঠে। এ নির্জনতায় কাঁচের তৈরী সব স্বপ্নরা ঘুমিয়ে আছে। দেখ তোমার পায়ের শব্দে না ভেঙ্গে যায় কোন স্বপ্ন, যেন জেগে না ওঠে। সে তক্ষুনি মরে যাবে। ঘুমুতে যাও ওদের, জাগিও না। নিদ্রার জগতেই ওদের বিচরণ, নিদ্রাই ওদের জীবন আর জাগরণই ওদের মৃত্যু। তাই বলছি, ধীরে চল, খুব ধীরে।

Bengali Shayari-46

নারী দেহবল্লরীতে উরজের উল্রাস।
দেখ।
দেখ স্তনের অপরূপ শোভা।
নারীর স্তন যেন নদীর ঢেউ, যেন তুর্কীর গর্বিত সৈনবাহিনী,
যেন বিস্ফোরণপূর্বের বোমা,
যেন একট উল্লাসিত স্বাস্থ্যোজ্জ্বল বালক, যেন স্বপ্নসলিলে ভরা একটি কলস,
যেন রূপলাবণ্যের এক সমুদ্র,
যেন চন্দননির্মিত এক মূর্তি,
যেন যৌবনের এক তীর্থক্ষেত্র।

Bengali Shayari-45

তীরের জন্য যাদের প্রাণ আনচান করে কাঁদে তাঁদের আগে থেকেই সাবধান করে দিই।
প্রেমের সাগরে নামার আগে জেনে নেয়া ভাল, এ সমুদ্রের কোন তীরই হয় না।

Bengali Shayari-44

শত্রুতা করার সময় হে বন্ধু, একটু ভেবেচিন্তে কর।
দেখ এত নিষ্ঠুর ভয়ংকর শত্রুতা কর না যে পরে যদি আমরা আবার বন্ধু হয়ে যাই তখন লজ্জিত হতে হয়।
তোমার শত্রুতার মধ্যে একটু ছেদ রেখ, সুযোগ রেখ বন্ধু।
যতির পরে পুরানো বন্ধুত্ব ফিরে পেলে লজ্জা নেই,
কিন্তু শত্রুতার চরমে যদি আজ বন্ধুত্ব ছিন্ন করে ফেল,
পুনর্মিলনের সময় লজ্জায় মুখ তোলা যাবে কি করে সুতরাং হে বন্ধু,
শত্রুতা করবার সময় সম্পর্কে ছেদ রেখ ছিন্ন করে ফেল না।

Bengali Shayari-43

সুরা দেবার সময় কপালে এরকম কুটিল রেখা এঁকো না তুমি।
সুরা মানে আনন্দ, সুতরাং এ আনন্দদায়ক পানীয় হাসিমুখে পান করাও।
মনে রেখো, নেশা সুরার পরিমাণের উপর নির্ভর করে না।
সুরা কম থাকলে আমার চোখে চোখ মিলিয়ে সুরা ঢেলো
তাতেই আমার চরম নেশা হয়ে যাবে।

Bengali Shayari-42

তুমি এখনও অপ্রাপ্তবয়স্কা কিশোরী,
এখন যদি হৃদয় দিই কোথাও হয়ত হারিয়ে বসবে।
তোমার জন্যই রাখা রইল, যখন বড় হয়ে উঠবে,
কিশোরী থেকে হয়ে উঠবে সদ্যযৌবনা, তখন নিয়ে নিও।

Bengali Shayari-41

মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা আমার এত আনন্দমিশ্রিত কেন জানতে চাও?
কারণ লোকমুখে শনেছি আমার নিষ্ঠুর প্রেয়সী নাকি আমার মৃতদেহ দেখতে আসবে।

Bangla Shayari-40

হে প্রেয়সী, বোকা ফুলটা তোমার রূপের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করার সুঃসাহস করেছিল।
সঙ্গে সঙ্গে বিরক্ত হাওয়া রেগে এসে ফুলের গালে লাগাল এক ঝড়ের চড়।
লজ্জায় লাল হয়ে গার স্বীকার করতে বাধ্য হল সেই দুর্বিনীত ফুল।

Bangla Shayari-39

সারা রাত তোমার স্বপ্ন দেখে সকালে যখন জেগে উঠলাম তখন চোখের তারায় তুমিই ভরে ছিলে।
তোমর মাদির যৌবনে ভরপুর ছিল আমার দৃষ্টির সরোবর।
রোদ্দুরভরা সকালটা ঝলমল করে উঠল তোমার পরিধেয় বস্ত্রের মতো স্বচ্ছ মাধুর্যে।
সকালের সদ্যজাতক হাওয়া তোমার দেহের মাদক গন্ধে ভারী ছিল।
তার কারণ আমি জানি।
আমি জানি এ হাওয়া তোমরা শেবার ঘরে তোমার নিদ্রাশিথিল দেহবল্লরী ছুঁয়ে এসেছে।
তোমার স্পর্শে আনন্দেই হাওয়ার এই মাতাল শ্লথচারিতা, এই সুরভির সম্ভার।

Bangla Shayari-38

কারাগারে ছোট্ট বন্দী কবি।
আলোর জন্য একটুখানি রোশনদান।
কবি বলেছেন- রোশনদান থেকে আলো যখন নিভে গেল তখন বুঝলাম রাত হয়েছে,
তোমার শূণ্য সিঁথি তারার মুক্তোতে ভরে গেছে হয়তো।
তারপর একসময় অনেকক্ষন বাদে,
যখন আমার ইস্পাতের হাতকড়িটা চিকচিক তরে উঠল,
বুঝলাম সকাল হয়েছে।
তোমারা মুখটা হয়তো সকালের মিঠে রোদ্দুরে রক্তিম হেয় উঠছে।

Bangla Shayari-37

স্বর্গ আর নরক কি আমি জানতাম না।
হে প্রেয়সী তোমার সঙ্গে আমার মিলনই হল স্বর্গ,
আর তোমার সঙ্গে আমার বিরহই হল নরক।
এখন আমি জেনেছি স্বর্গ ও নরকের সংজ্ঞা কি।

Bangla Shayari-36

হে প্রেয়সী, তোমকে কি করে বোঝাব আমার অশ্রুজলের মানে ।
চোখের কোণে যখন ছলকে ওঠে টলটলে অশ্রুর উষ্ণ বিন্দু,
তখন সেটা হল আগুনের স্ফুলিঙ্গ,
আর গাল বেয়ে গড়িয়ে যখন ঝরে পড়ে সেই অশ্রুর ফোঁটা,
তখন নেহাতই সেটা এক বিন্দু জল।

Bangla Shayari-35

যৌবনে একবার অন্তত আঘাত খাবার প্রয়োজন আছে।
প্রেমের জন্য প্রেয়সীর কাছ থেকে একবার আঘাত না পেলে যৌবনের সোনা পবিত্র হয়ে ওঠে না।
যেমন সম্পূর্ণ কাহিনীর জন্য একটি নামের প্রয়োজন হয়,
তেমনি যৌবনের সম্পূর্ণতার জন্য প্রয়োজন হয় একটি আঘাতের।

Bangla Shayari-34

ওরা কারা যাদের পাপ করার পর প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেও সময় জুটে যাচ্ছে?
আমরা তো জীবন এত স্বল্প লাগছে যে এক-আধটু যে পাপ করব,
তারও সময় জুটছেনা!

Bangla Shayari-33

ওরা কারা যাদের পাপ করার পর প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেও সময় জুটে যাচ্ছে?
আমরা তো জীবন এত স্বল্প লাগছে যে এক-আধটু যে পাপ করব,
তারও সময় জুটছেনা!

Bangla Shayari-32

বিদ্যুৎ এর চমক আমাকে সত্যি আনন্দে ভরে দেয়। কেননা আমার প্রিয়া, যে আমার নাম শুনে ভয় পায়, সে কিন্তু বিদ্যুৎ বজ্রপাতের সময় আকংকে আমাকেই জড়িযে ধরে। বিদ্যুৎ চমকানোর জন্যই আমার কপালে প্রিয়ার কোমল শরীরের আলিঙ্গন জুটে যায়। সেজন্যই বলছি বিদ্যুৎ চমকানো অন্যদের হয়ত ভাল লাগে না, আমাকে কিন্তু খুবই আনন্দ দেয় সে।

Bangla Shayari-31

যে কোনদিন কিছু করেনি তার কাজ করা কি করে আসবে? প্রাণ বাঁচিয়ে যে শুধু বাঁচতে চায় জীবনধানণ করে সে কি করে জানবে? কেঁদে কেঁদে যার শুধু মৃত্যু ভিক্ষা করে তারা তো বাঁচতেই শেখেনি, তারা মরতেও জানবে কি করে? নিঃশ্বাস নেওয়াই তো জীবন নয়, মৃত্যুও নয় শুধু নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়লেই জানা যায় জীবন কি, মৃত্যুকে জয় করতে পারলেই জানা যায় মৃত্যুর মানে।

Bangla Shayari-30

হে প্রেয়সী তোমার এ অপূর্ব ক্ষমতা দেখে মরে যেতে কার না ইচ্ছে করবে!
অবাক কান্ড আল্লাহ, যুদ্ধ করে যারা বীরাঙ্গনার মতো অথচ হাতে তলোয়ারও নেই।
প্রেমের অসিযুদ্ধে প্রেমিকার যৌবনমদমত্ত শরীরই তো হয়ে ওঠে সূতীক্ষ্ণ তরবারী।
হাতে প্রয়োজন কোথায় লৌহনির্মিত তলোয়ারের….

Bangla Shayari-29

যে আগুন তুমি আমার জীবনে লাগিয়েছ আমার অশ্রুজল তাকে নির্বাপিত করেছে।
কিন্তু এখন আমার এই কান্নার জল যে আগুন লাগিয়েছে আমার হৃদয়ে তাকে ঠান্ডা কে করবে?

Bangla Shayari-28

প্রেয়সীর উপর আমার অভিমান হয়েছে।
রাগ করে উঠে পড়লাম।
কিন্তু এই ভেবে ওর বাড়ি থেকে বেরিয়েছি যে,
এইবার ও ডেকে আমাকে থামিয়ে দেবে,
মিষ্টকথায় আমার অভিমান ভেঙ্গে দেবে।
ভেবেছিলাম হাওয়ায় আমার কাপড় উড়ছিল
সেই কাপড়ের কোণ ধরে আমকে বসিয়ে দেবে ও।
এমন ধীর পদক্ষেপে হাঁটছিলাম যে
ডাক দিলেই শুনে আমি ফিরে আসেত পারতাম।
কিন্তু ও এমন নিষ্ঠুর প্রিয়া, যে আমাকে একবারও ডাকল না,
আটকাল না, কাপড় ধরে টেনে বসালো না।
আশাহত আমি ধীরে ধীরে এগিয়েই চললাম।
আর আজ ওর থেকে এত দূরে চলে এসেছি যে
আমরা দু’জন চিরকালের মত আলাদাই হয়ে গেলাম।
ও ডাকল না, আমার ফেরা হল না,
আমাদের সম্পর্কের ইতি হয়ে গেল

Bangla Shayari-27

যখন নৌকা অটুট ছিল তখন তীরের চিন্তা আমি কোনদিন করিনি।
কেননা যখন খুশি তীরে পোঁছে যেতে পারতাম।
এখন যখন আমার নৌকা ভেঙ্গে গেছে এখনও আমি তীরের চিন্তা করি না।
কেননা যতই চেষ্টা করি না কেন তীরে আমি কোনদিনই পোঁছাতে পারব না।

Bangla Shayari - 26

তোমাকে চাইবো, তোমায় যারা চান তাদেরও চাইবো?
এত বড় কঠিন সওদা।
তার চেয়ে আমার হৃদয আমাকে ফিরিয়ে দাও,
ও সওদা করতে আমি রাজি নই।

Bangla Shayari-25

তুমি কি কখনও কারুর প্রাণ চলে যেতে দেখেছ?
দেখনি?
ঐ দেখ আমার উপর অভিমান করে আমর প্রাণ চলে যাচ্ছে।
প্রেয়সীকেই কবি বলেছেন ‘মেরি জান’ অর্থাৎ কবির প্রাণ।
প্রেয়সীর অভিমানভরে চলে যাওয়া কি
প্রাণ চলে যাওয়ার চাইতে কম দুঃখজনক?
কম ক্লেশকর। কম শোকাবহ?

Bangla Shayari-24

প্রেয়সীর সঙ্গে আমার মিলনের রাত এ জীবনে আমার ভাগ্যেই নেই।
যদি আয়ু আমার আরও বেড়ে যেত তবুও এ দূর্ভাগ্যই কপালে থাকত।
আমার অপেক্ষায়ই থাকতে হত আমাকে।
এ প্রতীক্ষাই আমার ভাগ্যলিপি,
জীবনের দিন বাড়লে সেটা হত অপেক্ষারই করুণ দিনলিপি।

Bangla Shayari-23

তোমার পৃথিবী, তোমার হৃদয় ছেড়ে কোথায় যাব বল?
আমি হচ্ছি ফুলের সুগন্ধ।
ফুল ছেড়ে কোথায় আর যেতে পারি আমি?
তুমি আমার ফুল আর প্রেম আমার হল সেই ফুলের সুরভি।
ফুল ছেড়ে সুরভি কি চলে যেতে পারে?

Bangla Shayari-22

মধ্যরাতে ঝমঝম করে যখন বৃষ্টির কান্না ঝরে পড়ে
তখন আমার মনে হয় এই কালো কালো মেঘগুলোর
পর্দার পেছনে এমন কেউ কেউ হয়ত রয়েছে যাদেরও হৃদয় আছে আমাদেরই মত।
যা মানবিক বিষাদে ভরা, অনুভূতিতে জীবন্ত, বেদনায় আর্ত ক্রন্দনে মূর্ত।
হৃদয়বান না হলে সে কাঁদবে কেন?
কেন হবে অর্ধরাতে এই প্রবল বিষন্নবর্ষণ?

Bangla Shayari-21

দুটো বিপরীত দূর্বিনীত হাওয়ার যুদ্ধেই জন্ম নেয় তুফান।
আমাদের জীবনে যে প্রেমের ঝড় উঠেছে সেটাও দু’টি তীব্র হাওয়ারই মিশ্রণ।
নইলে বল, কেনই বা তুমি এত সুন্দরী হয়েছ,
কেনই বা আমি এত য়ৌবনমত্ত হয়েছি?
তোমার রূপ ও আমার যৌবন এই দুই দূর্বীনীত কামনার
হাওযাতেই আমাদের প্রেমের এই তুফানের জনম।

Bangla Shayari-20

যারা তোমার সঙ্গসুধা পান করেছে তারা নিশ্চয়ই ভাগ্যবান।
কিন্তু তোমার স্বপ্ল বুকে নিয়ে যারা মরে গেল,
তোমার প্রেমের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যারা
ব্যর্থ প্রেমে জ্বলে পুড়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল তাদের মহত্ত্ব আলাদা।
তাদের ভাগ্যহীনতাই প্রেমিক হিসেবে এক জাতের অমরত্ব
দান করে যা অকল্পনীয়, অনির্বচনীয়, অপ্রকাশ্য।

Bangla Shayari-19

তোমার অর্ধমুদিত চোখে কটাক্ষের তীর কেন? কেন নয় উন্মীলিত আঁখির তীব্র দৃষ্টির দ্রুতগামী তীর? আমার হৃদয়ই একমাত্র এর জবাব দিতে পারে। যদি দ্রুতগামী তীরের অস্ত্র হত তাহলে সেই তীর তো আমার হৃদয় ভেদ করে বেরিয়ে চলে যেত, তাতে কি বেদনা এমন চিরস্থায়ী হত? কক্ষনো নয়। কিন্তু এই অর্ধনেত্রের বাণ হৃদয়ে শ্লথ গতিতে এসে বিদ্ধ হয়ে স্থির হয়ে রয়েছে। ফলে এ বেদনায় রয়েছে স্থায়ী এক আনন্দ মিশ্রিত কষ্টের আমেজ। এই বেদনার মাধুরিমার তুলনা নেই। এ আমারই হৃদয় যে শুধু এই প্রেমের যন্ত্রণার আনন্দের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ আমারই প্রেমিক হৃদয়ের গর্বের ঐশ্বর্য।

Bangla Shayari-18

এমন তো কথা নয় যে পৃথিবীতে তোমার চাইতে সুন্দরী আর কোথাও নেই।
কিন্তু কি করব আমার এ হৃদয় অন্য কারুর কাছে যাবে না।
শুধু তোমার জন্য এ হৃদয় পাগল হয়ে উঠেছে।
বোঝালেও এ অবুঝ হৃদয় কিছুতেই বুঝবে না।

Bangla Shayari-17

প্রেম নেই, ভালবাসা নেই।
আমাকে মাথা ঠুকে ঠুকে হয়ত মাথা ফাটিয়ে ফেলতে হবে নিরাশায়।
তাই যদি হয় তবে মাথা ফাটাবার জন্য কেন তোমারই দরজার পাথরে মাথা ঠুকব?
হে পাষণহৃদয়া নারী,
যদি এভাবে মৃত্যুই আমার ভাগে থাকে,
তবে তোমার দরজার পাথরে মাথা ফাটাবো না আমি ।
মাথা ফাটাবার জন্য অন্য কোন দ্বার পাব,
অন্য কোন কঠিন প্রস্তর,
পাব অন্য কোন সংঘাতময় সমাপ্তি।

Bangla Shayari-16

হে বর্ষা,
এত বেশী ঝরো না যে আমার প্রেয়সী আমার কাছে আসতে না পারে।
ও এসে যাওয়ার পর এর মুষলধারায় ঝরো যে ও যেন যেতেই না পারে।

Bangla Shayari-15

এই যে উড়ো উড়ো চেহারা, এই যে অগোছালো চুল,
তোমার সকালের ঘুমভাঙা এই চেহারাই বলে চিচ্ছে তোমার রাত্রির ইতিহাস।
তোমার প্রেমাভিসারের রাত্রির মানচিত্র তোমার সদ্যজাগ্রত চেহারাতেই রয়েছে।

Bangla Shayari-14

আপনি দুঃখ করবেন না, মিছেমিছি প্রায়শ্চিত্ত করার কথা ভাববেন না।
আর প্রেমকে অস্বীকার করেছেন তার জন্য, আমার জন্য বিন্দুমাত্র ভাববেন না।
আপনার মাথার দিব্যি খেয়ে বলছি, আমি ভালই আছি। ‘দাগ’ ঠিকই আছে।
মিথ্যে দুঃখ করবেন না আমার জন্য।

Bangla Shayari-13

সময় বড় মনোযোগ দিয়ে আমার জীবনের কাহিনী শুনে যাচ্ছিল।
আমিই কাহিনী বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি।
জীবন তো তাই অসমাপ্ত কাহিনী। সময় চলছে চলবে।
আর অসমাপ্ত কাহিনী নিয়ে এক একটি জীব ঘুমিয়ে পড়ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সময় শুনছে এরকম কত অসমাপ্ত কাহিনী, শুনবে আরও কত!

Bangla Shayari-12

আমার কান্নার ভাগ যে অংশে রয়েছে,
আমার জীবনের সে অংশটাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অংশ।
জীবনের উল্লেখযোগ্য পরিচ্ছেদ তো দুঃখেরই পরিচ্ছেদ,
অশ্রুভারাক্রান্ত ভাগই তো জীবনের উৎকৃষ্ট ভাগ।

Bangla Shayari-11

প্রেমের ওপর জোর চলে না। প্রেম কারুর শাসন মেনে চলে না।
প্রেমের ওপর কারুরই আধিপত্য নেই।
প্রেম এমন একধরনের আগুন যা ইচ্ছে করলেই লাগানো যায় না,
ইচ্ছে করলেই নেবানোও যায় না।
যখন জ্বলবার জ্বলে ওঠে, যখন নিভে যাবার নিভে যায়।

Bangla Shayari-10

প্রেমের ওপর জোর চলে না। প্রেম কারুর শাসন মেনে চলে না।
প্রেমের ওপর কারুরই আধিপত্য নেই।
প্রেম এমন একধরনের আগুন যা ইচ্ছে করলেই লাগানো যায় না,
ইচ্ছে করলেই নেবানোও যায় না।
যখন জ্বলবার জ্বলে ওঠে, যখন নিভে যাবার নিভে যায়।

Bangla Shayari-8

আমি যে তোমাকে চাইছি এতে অপরাধ কি?
এই তুমি, এবার তোমার সামনে এই আয়না রাখছি।
দেখে তুমিই বিচার কর। হে প্রিয়া, তুমি এত সুন্দরী, কার সাধ্য তোমাকে ভাল না।
বেসে থাকতে পারে? নিজেকে আয়নায় দেখে বুঝতে পারবে এত রূপসীকে চাইবার
জন্য সবাই উৎসুক থাকতে বাধ্য, এতে কারুর কোন অপরাধ নেই।

Bangla Shayari-7

কোথাও আগুন লেগে উঠলে, শ্রাবণ তার বৃষ্টিধারায় তাকে নিবিয়ে দেয়।
কিন্তু শ্রাবণ নিজেই যেখানে আগুন লাগায়, তাকে নেবাবে কে?
পত্রঝরার ঋতু এলে বাগান শূন্য হয়ে যায়; বসন্ত এসে সে বাগানকে আবার ফুলে ফুলে ভরে দেয়।
কিন্তু বসন্ত নিজেই যেখানে ফুল ঝরিয়ে দেয়, সে বাগানের ফুল ফোটাবে কে?
আমার স্বপ্ন কি করে ভাঙলো সে কথা আমাকে জিজ্ঞেস করো না।
অন্যের ব্যাপারে নয়, এটা আমাদের নিজেরই ভাগ্যের ফল।
শত্রু যখন আঘাত দেয় তখন বন্ধু এসে সমবেদনা জানায়।
কিন্তু যখন মনের মানুষই বিক্ষত করে, তখন সে ক্ষত সারাবে কে?
জানিনা কিসে কি হয়ে যেত, বা আমি কি করে বসতাম! সে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
বন্ধু সাথে আছে বলেই বেঁচে আছি। নইলে মরেই যেতাম।
জানি, তুফানের কাছে কারুর জোর খাটে না। তবু বলব এটা ঢেউ-এর দোষ নয়।
দোষ অন্য কারুর। মাঝ নদীতে নৌকা যখন ঝড়ের মুখে টলমল করে তখন মাঝি তাকে তীরে নিয়ে আসে।
কিন্তু যে নৌকাকে মাঝি স্বয়ং ডুবিয়ে দেয় তাকে কে বাঁচাবে?

Bangla Shayari-6

হে প্রেম,
তুমি যে নৌকার মাঝি সে নৌকা তুফান বাঁচিয়ে কি করে আসতে পারে বলো?
প্রেম মানেই তো ঘূর্ণির আবর্ত, ঝড়ের ঠিকানা।
প্রেম মানেই তো যন্ত্রণার নিমন্ত্রণ দুঃখের মোহনা নয়?…

Bangla Shayari-5

বেশী হোক কম হোক ‘হৃদয়ের শান্তি’ আমি অনেক খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি।
সবাইকে তাই আমি জানিয়ে দিতে চাই-
এ পৃথিবীতে সব পাওয়া যায় কিন্তু হৃদয়ের শান্তি কোথাও পাওয়া যায় না।
সারা জীবন খুঁজে যাবেন কিন্তু কোনদিন তার নাগাল পাবেন না।

Wednesday, October 15, 2014

আমার কবিতা -৭


দুঃখ পাখি

মুহূর্ত মির্জা খান 
******************
কোন স্বপনের ময়না পাখি
কেন আমি তোরে ডাকি ? ,
জানি আসবি না ফিরে তুই
তবুও যেন আশায় জেগে রই ।

সে আমার কাছে ছিল এক সময়
যতন করতাম বসিয়ে ডানায়-
হয়নি পছন্দ তার আমারে ,
দুঃখ দিয়ে গেছে সে সরে ।

এক কাল বৈশাখী এসে হায়
আমার কাছে জবাব চায় ,
কোথায় পাখির বাসা -
কোথায় তোর সেই ভালোবাসা ।

বুকের মাঝে লালন করে
মিষ্টি মিষ্টি সুরে সুরে ,
পুষিয়ে রাখি বারে বারে
কেমনে আমি দেই তোরে ?

ঝড় ফিরে গেল আপন মনে
সুখ ফিরে এল সেই ক্ষণে
আদর করে পাখিরে আমার
চুমু আমি দেই শত বার ।

এতো কিছু পরেও পাখি
ভাসালো আমার দুই আখি
এর পরেও অপেক্ষায় থাকি
মনে বসে আছে দুঃখ পাখি ।
*******************

আমার কবিতা - ৬


ভালোবাসা মৃত্যুহীন ( সনেট )

- মুহূর্ত মির্জা খান
*********************
ওগো বন্ধু প্রিয়তমা বান্ধবী আমার
ভালোবাসা কাকে বলে শুন সারাৎসার
অন্তরের মাঝে যদি কখনও অন্তর
এসে পড়ে সৃষ্টি হয় একই ভাবান্তর ।
তাহলে দেহের মাঝে সৃষ্ট আর্কষণ
প্রেম বলে খ্যাত হয় জানে শুধু মন ।
হাতে হাত ,চোখে চোখ নহে ভলোবাসা
ভালোবাসা উপলব্দি অন্তরের ভাষা ।

ভালোবাসা মৃত্যুহীন অনন্ত অক্ষয়
শুরু আছে শেষ নেই পরম সঞ্চয় ।
স্মৃতির মাঝারে প্রীতি সে যে উম্মাদনা
অন্তরে অন্তরে শুপ্ত অনুভূতি কণা ।
বান্ধবী এ ভালোবাসা অন্তরের আলো
দূর করে কলুষতা সর্ব গ্লানি কালো ।

Tuesday, October 14, 2014

দুই বিঘা জমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে ।
বাবু বলিলেন , ‘ বুঝেছ উপেন , এ জমি লইব কিনে । ‘
কহিলাম আমি , ‘ তুমি ভূস্বামী , ভূমির অন্ত নাই ।
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো – জোর মরিবার মতো ঠাঁই । ‘
শুনি রাজা কহে , ‘ বাপু , জানো তো হে , করেছি বাগানখানা
পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা —
ওটা দিতে হবে । ‘ কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে , ‘ করুণ বক্ষে গরিবের ভিটেখানি ।
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া ,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া ! ‘
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে ,
কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে , ‘ আচ্ছা , সে দেখা যাবে । ‘
পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে —
করিল ডিক্রি , সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে ।
এ জগতে , হায় , সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি —
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি ।
মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে ,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে ।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য
কত হেরিলাম মনোহর ধাম , কত মনোরম দৃশ্য !
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি ।
হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো – ষোলো —
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হল ।
নমোনমো নম সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি !
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর , জীবন জুড়ালে তুমি ।
অবারিত মাঠ , গগনললাট চুমে তব পদধূলি ,
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি ।
পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল — নিশীথশীতল স্নেহ ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে —
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান , চোখে আসে জল ভরে ।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে —
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রথতলা করি বামে ,
রাখি হাটখোলা , নন্দীর গোলা , মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে ।
ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে , শতধিক্‌ তোরে , নিলাজ কুলটা ভূমি !
যখনি যাহার তখনি তাহার , এই কি জননী তুমি !
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফল ফুল শাক পাতা !
আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ —
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা , পুষ্পে খচিত কেশ !
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন —
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী , হাসিয়া কাটাস দিন !
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন !
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি , ক্ষুধাহরা সুধারাশি !
যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী , হলে দাসী ।
বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি —
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে , সেই আমগাছ একি !
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা ,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক – কালের কথা ।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম ,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম ।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর , পাঠশালা – পলায়ন —
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন !
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে ,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে ।
ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা ,
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা ।
হেনকালে হায় যমদূত – প্রায় কোথা হতে এল মালী ,
ঝুঁটি – বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি ।
কহিলাম তবে , ‘ আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব —
দুটি ফল তার করি অধিকার , এত তারি কলরব ! ‘
চিনিল না মোরে , নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ —
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ – সাথে ধরিতেছিলেন মাছ ।
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন , ‘ মারিয়া করিব খুন ! ‘
বাবু যত বলে পারিষদ – দলে বলে তার শতগুণ ।
আমি কহিলাম , ‘ শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয় ! ‘
বাবু কহে হেসে , ‘ বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয় । ‘
আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি , এই ছিল মোর ঘটে —
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ , আমি আজ চোর বটে !

মানুষ – কাজী নজরুল ইসলাম

গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’


মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!”


কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড় ;

ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার !

খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা ?

সব দ্বার এর খোলা র'বে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা !

হায় রে ভজনালয়

তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয় !

মানুষেরে ঘৃণা করি

ও' কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি

ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে

যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে ।

পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !--মুর্খরা সব শোনো

মানুষ এনেছে গ্রন্থ,--গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো ।

আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ

কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,

আমাদেরি এরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের মাঝে

তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে !

আমরা তাঁদেরি সন্তান , জ্ঞাতি , তাঁদেরি মতন দেহ

কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ ।

হেস না বন্ধু ! আমার আমি সে কত অতল অসীম

আমিই কি জানি কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম ।

হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদি ঈসা,

কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার দিশা ?

কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি ?

হয়তো উহারই বুকে ভগবান জাগিছেন দিবারাতি !

অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,

আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ - দহে,

তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজানালয়

ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয় !



হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর -বাসে

জন্মিছে কেহ-জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে !

যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে

আজিও বিশ্ব দেখেনি--হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে !





ও কে ? চন্ডাল ? চমকাও কেন ? নহে ও ঘৃণ্য জীব !

ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব ।

আজ চন্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী-সম্রাট,

তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী পাঠ ।

রাখাল বলিয়া কারে কর হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে !

হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে !

চাষা বলে কর ঘৃণা !

দেখো চাষা রুপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না !

যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারও ধরিল হাল

তারাই আনিল অমর বাণী--যা আছে র'বে চিরকাল ।

দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,

তারি মাঝে কবে এলো ভোলা -নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি !

তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে

দ্বার দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলৈ ।

সে মোর রহিল জমা -

কে জানে তোমারে লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কি না ক্ষমা !

বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ দু'চোখ স্বার্থ ঠুলি,

নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলী ।

মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা মথিত সুধা

তাই লুটে তুমি খাবে পশু ? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা ?

তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে

তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোনখানে !

তোমারি কামনা-রাণী

যুগে যুগে পশু ফেলেছে তোমায় মৃত্যু বিবরে টানি ।

বীরপুরুষ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সকল মায়ের জন্য রইল শুভেচ্ছা এবং কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা)

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
রাঙা ধূলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।
সন্ধ্যে হল, সূর্য নামে পাটে,
এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।
ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই,
কোনোখানে জনমানব নাই,
তুমি যেন আপন-মনে তাই
ভয় পেয়েছ-ভাবছ, ‘এলেম কোথা।’
আমি বলছি, ‘ভয় কোরো না মা গো,
ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।’
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে-
অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
‘দিঘির ধারে ওই-যে কিসের আলো!’
এমন সময় ‘হাঁরে রে রে রে রে’
ওই – যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে!
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
‘আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!’
তুমি বললে, ‘যাস নে খোকা ওরে,’
আমি বলি, ‘দেখো-নাচুপ করে।’
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে
শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।
এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক’রে,
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে,’
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে
বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল’
কী দুর্দশাই হত তা না হলে!’

কেউ কথা রাখেনি-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে? একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!

বসন্ত বন্দনা – নির্মলেন্দু গুণ

হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,—দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরন,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে, মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কি আনন্দ জাগানিয়া।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতই ফেরাই চোখ,
যতই এড়াতে চাই তাকে, দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্যখানি
নবীন পল্লবে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরূপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।

কৃষ্ণকলি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

একটি পাগল ছেলের গল্প



একটা গল্প শুনবেন। গল্প, শুধুই গল্প।
যে গল্পে থাকবে একটা পাগল ছেলে। যার
জীবনে উচ্চাকাংখা বলে কিছুই নেই।
যে বর্ষাকালে বারান্দায় প্রিয়জনের
সাথে বসে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ
শুনতে চায়।
পরীক্ষা ফেলে বৃষ্টিতে ভিজতে যায়।
মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায়
চলে যায় কেউ জানে না। আর
থাকবে একটা মেয়ে, অতি সাধারন।
ছেলেটা ভীষন ভালবাসবে মেয়েটাকে।
যে ভালবাসা কখোনো কিছু
দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। আর মেয়েটা?
মেয়েদের মন কবে কে বুঝতে পেরেছ?
সে কি চায় নিজেও তা জানবে না।
জানি এই গল্পের পরিনতি ভাল হবে না।
তবুও
ছেলেটা গল্পটা এগিয়ে নিতে চাইবে।
2
মেয়েটা কি তার সঙ্গ দেবে? অবশ্যই
দিবে। কারন মেয়েটাও
যে ভালবাসে ছেলেটাকে। মেয়েটা চায় তার
ভালবাসা প্রকাশ করতে। আর ছেলেটা চায়
ভালবাসা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে।
মুখের কথা দিয়ে নয়। ছেলেটা কিছুতেই
বুঝে উঠতে পারে না, “দিনের মধ্যে হাজার
বার ভালবাসি না বললে কি হয়?
ভালবাসা কি কমে যায়? ”কিন্তু
মেয়েটা বুঝতে চায় না। সারাক্ষণ
অপেক্ষায় থাকে। অন্তত একবারের জন্য
হলেও ছেলেটা তাকে বলুক। বলুক,
“ভালবাসি, শুধুই তোমাকে।“ ছেলেটার
মুখের এই ছোট্ট বাক্যটাই তার সকল
প্রেরণা। তাইতো সকাল দুপুর সন্ধা নেই
ফোনের পর ফোন দিয়ে যায়। শুধু একবার
ভালবাসি শোনার অপেক্ষায়। দুইজনের
অনুভুতি, দুই জনের চাওয়া পাওয়া সবই
ভিন্ন। তারপরও গল্পটা এগিয়ে চলে।
হাসি, কান্না, আনন্দ, ব্যাথা-বেদনার
মিশ্রনে।
3
এটা একটা পাগল ছেলের গল্প।
পাগলামি না করলে কি চলে? শুরু হয় তার
পাগলামী। হটাৎ করেই সে যোগাযোগ
বন্ধ করে দেয় মেয়েটার সাথে।
“ভালবাসি ভালবাসি বলে চিৎকার
করাটা তার লোক
দেখানো মেকি মনে হয়।“ যোগাযোগ
বন্ধ করে দিলে কি হবে, তার
প্রতিটা স্বপ্ন জুড়ে থাকে মেয়েটা। তার
প্রতিটা কাজের
প্রেরণা হয়ে থাকে মেয়েটা। তার
অনুভুতি জুড়ে তার অস্তিত্ব জুড়ে শুধু
সেই মেয়েটা আর মেয়েটা। আর মেয়েটার
কি খবর?
ছেলেটাকে হাড়িয়ে সে পাগল প্রায়। খায়
না ঘুমায় না এমন কি বেঁচে থাকতেও চায়
না। তবুও বেঁচে থাকতে হয়। জীবনের
প্রয়োজনে। সময় গড়িয়ে যায়। মাসের পর
মাস, বছরের পর বছর।
ছেলেটা ভুলতে পারে না মেয়েটাকে।
তাকে নিয়েই ভাবে। তাকে নিয়েই স্বপ্ন
দেখে।
তারপর?

4
না, এটা একটা গল্প। বাস্তব কিছু নয়।
গল্পের মেয়েরা একটু অন্য রকম হয়। তাই
মেয়েটা ছেলেটাকে আবার ফোন করে।
কথা হয় দুজনার। তারা ভুলে যায়
মাঝখানে কয়েক বছর পার হয়ে গেছে।
জীবন
থেকে তারা হাড়িয়ে ফেলেছে অনেক
মুল্যবান
সময়। সেই সময়ের
প্রয়োজনে ছেলেটা হাড়িয়ে ফেলেছে তার
ভালবাসা। হাড়িয়ে ফেলেছে তার প্রানের
প্রিয়াকে। মেয়েটা আর তার নেই।
বিয়ে করেছে তার পছন্দের ছেলেটাকে।
যে তার খবর নেয়। দিনের মধ্যে হাজার বার
ভালবাসি ভালবাসি বলে তার পায়ে লুটায়।
ছেলেটার আকাশে আজ মেঘের ঘনঘটা।
যখন তখন বৃষ্টি নামে। তার
এলোমেলো জীবনটা আরো এলোমেলো হয়ে যায়।
তবুও সে মেয়েটার ভাল চায়।
চাইবে না কেন, দোষটাতো মেয়েটার না।
সেই-তো যোগাযোগ বন্ধ করেছিল।
নিজের দোষে নিজেকে ছাড়া আর
কাউকে তো শাস্তি দেয়া যায় না।
তাইতো নতুন করে নতুন ভাবে বাঁচতে চায়
সে। যেহেতু এটা গল্প। তাই শেষ হয়েও
শেষ হয় না।

5
কোন একদিন গভীর রাতে ছেলেটার
ফোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই সে শুধু
কান্নার শব্দ শুনতে পায়। মেয়েটা কাঁদছে।
কাঁদছে তো কাঁদছেই।
কান্না জড়ানো কন্ঠেই মেয়েটা বলে,
“আমি জানি আমার ফেরার পথ নেই। তবু
একটা কথা বলতে চাই। আমি শুধু
তোমাকে ভালবাসি। শুধুই তোমাকে। আর
কাউকে নয়। কোন দিন কাউকে বাসতেও
পারব না।“ ফোন কেটে যায়।
একাকী ছেলেটা জেগে থাকে। দু
চোখে বৃষ্টি নামে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়,
যা হবার তাই হবে। এভাবে কষ্ট পাওয়ার
মানে হয় না। কথা বলে মেয়েটার সাথে।
মেয়েটা সাড়া দেয় আগের মত। দুজন
দুজনকে পেতে চায় আপন করে।
কিন্তু সমাজ?
মেয়েটাই এগিয়ে আসে এর সমাধানে।
সে বিয়ে করেছে ঠিক। তবে একদিনও
স্বামীর ঘর করেনি। সে তালাক
দিয়ে দিবে স্বামীকে। তারপর দুজন
পালিয়ে যাবে। ঘর পালানো ছেলেটার
কাছে কাজটা সহজই মনে হয়।
তারপর?
তার আর পর নেই। ছেলেটা অপেক্ষায়
থাকে মেয়েটার। মেয়েটা ফোন দেয় না।
ছেলেটা ফোন দেয়। মেয়েটা ফোন ধরে না।
ছেলেটা আবার ফোন দেয়। মেয়েটা ধরে না।
ধরে না………………।
পরিশিষ্ট: গল্পটা শেষ। ছেলেটার
সাথে মেয়েটার আর কোনদিন দেখা হয়
নি। হয়ত
কোনদিন হবেও না। হয়ত মেয়েটা তার
স্বামী সংসার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে।
কিন্তু
মাঝরাতে মেয়েটার বলা একটা বাক্য
ছেলেটাকে আজ পাগল করে দিয়েছে।
আজও
তার কানে বাজে, “আমি জানি আমার
ফেরার পথ নেই। তবু একটা কথা বলতে চাই।
আমি তোমাকে ভালবাসি। শুধুই
তোমাকে। আর কাউকে নয়।“